ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

মোস্তফা কামাল পাশা

নন্দনকাননে ভিআইপি বিডি

অকম্মার ঢেঁকি আছে একখান ই, তামাম দেশে। কে বলার দরকার আছে কী? নিজ আক্কেলে বুঝে নিন। অকম্মা বলতে কার ভাল লাগে? কারো না-আমারও না, তবুও! আলিশান অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সেও আমিই শুধু! পথ্য নিয়ে সকাল ১০টার আগপিছু হাটতে বেরুই। নিত্য রুটিন, ব্যাতিক্রম বাদ। সঙ্গি কাউকে পাইনা। কোনদিনও না। সব লেভেলের ওয়াকওয়ে কাম করিডরে হেঁটে ফলাফল এটাই। ভয়াল করোনাকালেও সব্বাই কেজো মানুষ। ভোর বা বিকালটা ব্যবহার করেন কিনা জানিনা। স্বাস্থ্য সচেতন হলে না করেন কীভাবে?এত লোভনীয় সব ওয়াকওয়ে!

বেশিক্ষণ ওয়াকওয়েতে থাকিনা। চলে যাই ছাদে। সবুজ, আকাশ, বাতাস, সূর্য, মেঘ,পাখি সবাই অপেক্ষায়। ওদের টান এড়ানো কী সহজ? মোটেই না। ঘন্টা খানেক ছাদেই কাটে। রোদস্নান, ইয়োগা ওখানেই সারি। খোলা আকাশ, ফুল, ফল, প্রজাপতি, পাখির সাথে প্রেম ভালই জমেছে। একদিনের বিরহও অসহ্য। তো তিনদিন ধরে পেরেশানির একশেষ।

কবিগুরুর 'শাওনের ধারা' ঝরেনা ঝরঝর। এদিকে ঈদুজ্জোহা কদিন পর। রাজপথে গরু নিয়ে বিকালে শুরু হয় অস্থির প্রদর্শনী। সীমিত উৎসব, মৃত্যুর মিছিলে এমন নতুন হল্লা কীভাবে! আগেতো কখনো দেখিনি। এত হুল্লোড় দেখে পরিস্কার, মানুষের বিবেক-মননের অকাল মৃত্যু ঘটেছে। ধর্মান্ধতার অদ্ভুত আঁধার মানচিত্র ঢেকে ফেলছে!

বৃষ্টি নেই কিন্তু মেঘ সূর্যকে বুকের গভীরে গুঁজে রেখেছে। মাঝে মাঝে বাতাসের রথে চড়ে বৃষ্টির মৃদু শাওয়ার। মস্করাও করে! হঠাৎ-হঠাৎ মেঘের হাল্কা ওড়নার ফাঁকে সূর্য গড়ান দেয়। মিটিমিটি আলোর হাসি ঝিলিক মারে। কোমল তাপ শুষে নেই যদ্দুর সম্ভব।

এর ফাঁকে কুয়াশামোড়া বৃষ্টির ঝরোকাও। পাত্তা দেয় কে! তো, আজ ঘটাই কান্ড। অকম্মা রূপ পাল্টে সর্বকর্মার একজন! ভয়াবহ কান্ড! শাওন বেটিকে বেকুব বানিয়ে এক সফেদ মেঘ ললনাকে আঙুল ইশারায় কাছে ডাকি।

ও আসবে কেন? আবার না এসে যাবেইবা কই? অকম্মার ঢেঁকিতো এখন সর্বকর্মা,পারেও সব। দ্রুত আসনে বসে হিপনোটাইজড করে পথ আটকে নামিয়ে আনি ললনাকে। সাঁ করে নেমে আসে ছাদের উপর। ডাইভ দিতে চাইলে হাঁক দেই, যাস কই, থাম বেটি।

কেন, আমার তাড়া আছে। কী বলবে বলে ফেল ঝটপট। ঝটপটানি রাখ, নাম নিচে। না, পারব না, সম্ভব না। তোর অসম্ভবের কেতা পুড়ি, নাম বলছি। কড়া ধমক খেয়ে বেচারি ল্যান্ড করতে বাধ্য হয়। মেঘের দুরাবস্থা দেখে চারপাশে বাগানের সব গাছ, ফুল, ফল, প্রজাপতি হেসে-নেচে অস্থির।

সুরক্ষা দূরত্ব ভেঙে একের গায়ে অন্যে ঢলে পরে। বাতাস তবলা ঠুকে মনের আনন্দে। একলাফে মেঘের কোমলতায় চেপে বসি। মেঘ ললনাতো ভয়ে অস্থির, এই করো কী-করো কী! গলে যাব কিন্তু। গলাগলি চলবেনা তোর। তৃতীয় আসমানে নিয়ে চল-তোদের বাড়িতে। ওখানে নন্দন কাননে রোদস্নান দেব।

কীভাবে, ওখানে জীব জগতের কারো প্রবেশ নিষেধ। ধ্যাত্তেরিকা, তোরা জীব জগতে আসতে পারলে আমরা নই কেন? জলদি চল। ত্যাঁদড় বেটি টেক অফ করেইনা। কোয়ার্টার সেকেন্ড ধ্যানে বসে আবারও কড়া হিপনোটোনাইজ! এবার সাঁই করে উড়াল দেয় মেঘ বালিকা। দ্রুত ছুট লাগাও, ঘন্টায় মিলিয়ন কিলো গতিতে।

সোয়া ১২টায় ফিরে নাস্তা সারব। নির্দেশ জারি করে জুৎ করে আসন পেতে বসি। অত দ্রুত দৌঁড়ালে ফেঁসে যাবতো, মেঘ ললনা ভয় পেয়ে সাবধান করে। ফাঁসবিনা, ফুস মন্তরে তোকে জমাট করে দিচ্ছি। তারপর আর কথা নেই। ওর নরম-সরম শীতল কোমলতার আমেজ নিতে নিতে চারপাশের দৃশ্যপটে চোখ রাখি। কিন্তু গতির কারণে সব ধোঁয়াশা।

মাত্তর ১০ মিনিটে দ্বিতীয় আসমানের সিংহ দরজা। এবং কড়া ব্রেক! চশমা খুলে শীতল কুয়াশায় ঝাপসা চোখ ও গ্লাস মুছে দেখি, ইয়া তাগড়া দুই প্রহরী। লেজার গান তাক করে গেট পাশ দেখতে চায়। পাত্তাই দেইনা, বলি আমি তৃতীয় আসমানের নন্দন কাননে রোদস্নানে যাব। অপ্সরার দাওয়াতে। দাওয়াত কার্ড দেখান। প্রহরী সর্দারের হুকুম।

চেন আমাকে, আমি ভিআইপি-বিডি। ত্যাড়ামি করলে চাকরি নট। ভিআইপি-বিডিরা কার্ড সাথে রাখেনা। কড়া ঝাড়ি দেই পিচলা বেটাকে। তাহলে অপ্সরা রাণীর সাথে আগে কথা বলতে হবে। বলেই সেন্ট্রি পোষ্টের ইন্টারকম হাতে নেয় বেটা। দ্রুত নেমে আটকাই। কানে কানে ফুস মন্তর দেই। বেটা শেয়ানা মাল। সম্ভবত বিডি-ভিআইপিদের খবর রাখে। একটা সুইস অ্যাকাউন্টের গোপন পিনকোড দেই তাকে। দরজা খুলে যায়, আবার উড়াল। তৃতীয় আসমান সদর দরজায়ও সেম ঘটনা। দু'ফটক পার হতে ১০ মিলিয়ন ডলার শেষ।

তৃতীয় আসমানের সবচে' বড় ও সুন্দর কাননে মেঘ ললনা থামে। ওখানেই তাদের বাড়ি। বালিকা বলে, আমি টায়ার্ড। ফ্রেশ হয়ে ষ্টিম বাথ নিয়ে আসছি। ততক্ষণে তুমি কাজ সারো।

ইঙ্গিতে যেতে বলে চারপাশে চোখ রাখি! অনিন্দ্য সুন্দরের মেলা! ফুল-ফলের বাগান। প্রজাপতি, ভ্রমর, মৌমাছির উড়াউড়ি-গুন্জন। ছোট ছোট রঙিন পাখির কুজন, শীতল ঝর্ণা, সবুজ কার্পেটমোড়া টিলা, স্বচ্ছ জলধারা, স্ফটিক নীল হ্রদ। মাঝে মাঝে বিশ্রামের শেড।

সেখানে স্বর্ণ আর হীরের দ্যূতি ঠিকরাচ্ছে! দূরে চোখ ঝলসানো সুরম্য রিসোর্ট। দু'একজন অপ্সরাকে সঙ্গি করা গেলে মৌতাত ভালই জমত। কিন্তু আজ অতো সময় নেই, উপভোগের। পথ খুলেছে যখন আরেকদিন হবে। কয়েক মিটার হাটতেই মাথার উপর সূর্য। ঝকঝকে

নীল আকাশে আগুনের বিশাল সোনার টিপ! কাননের সবুজ কার্পেটে আরামে রোদস্নানে বসি। বিশ মিনিট পর

মেঘ ললনা ফিরে আসে। তরতাজা সতেজ সে। তো উঠো তাহলে। আমার ডিউটি আছে শিলং পাহাড়ে। তোমাকে ড্রপ দিয়ে ছুটতে হবে, ললনার তাড়া। রোদস্নানতো শেষ। তাই দেরি করিনা। ডুব দেই ললনার শীতল কোমলতায়। ১২টা ১০ মিনিটে পৌঁছে যাই অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের ছাদে। জেদের দাম ১০ মিলিয়ন ডলার, তো কী? নতুন আসমান রিসোর্ট ও নন্দনকানন ব্যবসায়ে দু'মাসেই জমা হবে বিলিয়ন ডলার। ইয়াহু--

মোস্তফা কামাল পাশা, গল্পকার ও সিনিয়র সাংবাদিক

  • সর্বশেষ
  • পঠিত