ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

ইউপি নির্বাচনে প্রতীক না নেয়া বিএনপির কৌশল

  শেখ তৌফিকুর রহমান

প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২১, ১২:২৭  
আপডেট :
 ০৮ মার্চ ২০২১, ১৬:১৭

ইউপি নির্বাচনে প্রতীক না নেয়া বিএনপির কৌশল
আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম।

আওয়ামী লীগে এক সুপরিচিত নাম আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে, জেল-জুলুম-নির্যাতন ভোগ করে আজ এ পর্যন্ত এসেছেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন নাছিম।

ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বাহাউদ্দিন নাছিম আওয়ামী লীগের সুপ্রতিষ্ঠিত নেতা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল এ সৈনিক শেখ হাসিনার দেশে ফেরার পর থেকেই ছিলেন তার ছায়াসঙ্গী। স্পষ্টভাষী নাছিম দলীয় কোনো অসঙ্গতি থাকলে অকপটে বলতে দ্বিধা করেন না। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। দলীয় বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে তিনি বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে মাদারীপুর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচত হয়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন নাছিম। গত নির্বাচনে দলীয় সভানেত্রীর পরামর্শে প্রার্থী না হয়ে তিনি দলীয় নির্বাচনী পরিচালনা কমিটিতে থেকে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত বিভিন্ন দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করেছেন।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগ ধানমণ্ডিস্থ নিজস্ব বাসভবনে দেশের রাজনীতির সমসাময়িক বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ জার্নালের সাথে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। বাহাউদ্দিন নাছিমের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলাদেশ জার্নালের নিজস্ব প্রতিবেদক শেখ তৌফিকুর রহমান। স্বাক্ষাতকারের চুম্বক অংশ আজ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

বাংলাদেশ জার্নাল: আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়েছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম: সাম্প্রতিককালে বিএনপি যে ঘোষণা দিয়েছে যে তারা নির্বাচন করবে না, এই ঘোষণার কারণে আমরা নতুন করে চিন্তা করবো কি করবো না সেটার আলোচনা আছে। আমরা সর্বশেষ অবস্থাটা দেখি। আর আমরা তো চাই সবাই অংশগ্রহণ করুক।

বাংলাদেশ জার্নাল: আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন কি তাহলে অংশগ্রহণমূলক হবে না বলে মনে হচ্ছে?

আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম: অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক হবে। বিএনপি প্রতীক নেবে না, এটি তাদের অন্য কৌশল। তারা জামাত-বিএনপি ঘরনার লোকজনকে জড় করার একটা অপকৌশল হাতে নিয়েছে। নির্বাচনে না আসার বিষয়টা তারা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার জন্য বলছে। সুতরাং সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। তারা প্রতীক নেবে মানে আমরা প্রতীক নেবো না তা তো না। আমাদের হিসাবটা আমরা বোঝার চেষ্টা করবো।

বাংলাদেশ জার্নাল: ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহারের নেতিবাচ প্রভাব পড়বে কিনা? অর্থাৎ নির্বাচনী সহিংসতা বা কোন্দল বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে কিনা?

আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম: আমাদের মধ্যে আলোচনা ছিলো নির্বাচনটা আমরা কিভাবে করবো। কেউ কেউ মনে করে এই সমস্ত প্রতীক দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে মারামারি, সংঘাত, বিভেদি, বিদ্রোহ, বিদ্রোহী প্রার্থী এগুলো খুব বেশি হচ্ছে। না হলে কম হবে। এটা কারো কারো মত। আবার এর বিপক্ষের বিষয়টা হলো এখন যে পদ্ধতিতে নির্বাচনটা হচ্ছে। এখন বিএনপি বা বিরোধীদল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বলে এক রকম হচ্ছে। যখন তারা অংশগ্রহণ করবে, শক্তভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আসবে, দলীয় প্রতীক ব্যবহারের গুরুত্বটা কিন্তু তখনই বোঝা যাবে। এর আগে এটা বোঝা যাবে না। আর স্থানীয় নির্বাচনে মারামারি ধরাধরি, বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলনা কবে? খুনোখুনি আরো অনেক বেশি হতো।

আমাদের যা দেখা, ’৮৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে একটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয়েছিলো। সে সময়ের ভংঙ্কর রূপ আমরা দেখেছি। এখন অনেক শান্তিপূর্ণভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখন চাইলেই কেউ সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে পারে না। কারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা বেড়েছে। তাদের মধ্যে একটা গুণগত পরিবর্তনও এসছে।

বাংলাদেশ জার্নাল: হঠাৎ রাজপথে সরকারবিরোধী পক্ষের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে দল কী ভাবছে?

আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম: আমরা এখন অনেক কিছুই শুরু করবো। আন্দোলন সংগ্রামের নামে যে গ্যাম্বেলিং শুরু হয়েছে, এর বিরুদ্ধে আমরা মাঠে নামবো। আমাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড আরো জোরদার করবো। আমরা পারি কিনা, আমাদের সাংগঠনিক সক্ষমতা আছে কিনা সেটা কিন্তু ভাস্কর্যের উপর আঘাত করার সাথে সাথেই আমরা একটুখানি দেখিয়েছি। ওটা কিন্তু কোন প্রস্তুতি ছাড়াই।

এদেশের মানুষের বৃহৎ অংশই মনে করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই বাংলাদেশকে আরো উন্নত সমৃদ্ধ করতে পারবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা, গণতান্ত্রিক চিন্তা বা একুশের চেতন সবগুলো একে অপরের সাথে জড়িত। এগুলোকে বাদ দিয়ে যারা মুখে মুখে শুধু গণতন্ত্রের বুলি আওড়ায় এরা কিন্তু আসল বাংলাদেশ চায় না। ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দুই লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ কিন্তু তারা চায় না। ওরা চায় সেই পচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশ। তারা সেখানে ফিরিয়ে নিতে চায়। কিন্তু সেখানে যাওয়ার আর সুযোগ নেই। ফিরে যাওয়ার জায়গা নেই। গেলে আমাদের সবকিছু ধুলিস্মাৎ হয়ে যাবে। এটা কিন্তু চেতনার জায়গা। এটা যারা বিশ্বাস করবে না তাদের সাথে আপোশ বা মিলতাল করা হয় যদি গণতন্ত্র তাহলে সেটি আমি বিশ্বাস করি না।

বাংলাদেশ জার্নাল: টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বীন সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। এই সময়টার মধ্যে অনেক উন্নয়ন অর্জন আপনাদের নেতৃত্বে সম্ভব হয়েছে। তারপরেও সুশাসনের বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম: কিছু সংকট আছে। আমরা বলবো না যে সমস্ত স্বাধীনতা দিতে পারছি। সুশাসন আমরা শতভাগ দিতে পারছি সেটা কিন্তু বলছি না। আমরা শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত করতে পেরেছি, এটা আমরা বলি না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করতে চাই, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে চাই। শেখ হাসিনার সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে। আমরাই বলি। আমাদের মাথাটা তো পচে নাই। একসময় পচা মাথা নিয়েই দেশ চলেছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত