ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

সাক্ষাৎকারে মাহমুদুর রহমান মান্না

কাগজে-কলমেই ঐক্যফ্রন্ট, সক্রিয়তা নেই

  কিরণ শেখ

প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২১, ২০:১২  
আপডেট :
 ১৩ জুন ২০২১, ২০:৫৩

কাগজে-কলমেই ঐক্যফ্রন্ট, সক্রিয়তা নেই

মাহমুদুর রহমান মান্না, সুপরিচিত রাজনীতিবীদ। ১৯৭২ সালে চাকসুর জিএস নির্বাচিত হন । ১৯৭৩ সালে জাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৭৬ সালে জাসদ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি হন। ১৯৭৯ সালে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা তিনি । ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন। পরে ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের পদ থেকে বাদ পড়েন মান্না। দূরত্ব তৈরি হয় দলটির সঙ্গে। পরে তিনি গড়ে তোলেন নাগরিক ঐক্য। বর্তমানে তিনি নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম সারির নেতা হিসেবে রাজনীতিতে সক্রিয়। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভবিষ্যতসহ নানা বিষয়ে বাংলাদেশ জার্নালের সঙ্গে কথা হয় মাহমুদুর রহমান মান্নার। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন কিরণ শেখ।

বাংলাদেশ জার্নাল: ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট কেমন হল?

মাহমুদুর রহমান মান্না: এটা কোন করোনার বাজেট হয়নি। স্বাস্থ্যখাতে আরো বেশি বরাদ্দ দরকার ছিলো। কিন্তু এই খাতে অতিরিক্ত কোন টাকাই দেয়া হয়নি। পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর কথা ছিলো, সেগুলো কিছু করা হয়নি। আর বাজেটকে বাণিজ্য ও শিল্প বান্ধব বাজেট করতে চেয়েছে, ট্যাক্সসহ অনেক কিছু তুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এগুলো করে কোন লাভ হবে না। আর বাজেটে দারিদ্রের ব্যাপারে কোন কথাই নেই। সুতরাং সর্বোপরিভাবে একটাকে আমি তো সফল বাজেট মনে করি না।

বাংলাদেশ জার্নাল: এক কথায় এই বাজেটকে আপনি কি বলবেন?

মাহমুদুর রহমান মান্না: খুবই গতানুগতিক, উচ্চাভিলাসী দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, কোন রকম সংস্কার হয়নি বলে প্রশাসনিক অযোগ্যতার কারণে এটা বাস্তবায়নযোগ্য বলে মনে হয় না। আর পরিপূর্ণভাবে দারিদ্রকে উপেক্ষা করে ধনীদের তোষণ করার নীতি এর মধ্যে আছে।

বাংলাদেশ জার্নাল: সরকার বলছে, করোনা মোকাবেলার তারা সফল হয়েছে- তাদের এই দাবি কতটুকু সঠিক বলে আপনি মনে করেন?

মাহমুদুর রহমান মান্না: এই যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। এটা কিন্তু আগেই আমরা নোটিশ পেয়েছি। তাই আমরা যদি আগেই সীমান্ত বন্ধ করতাম তাহলে এটা আসতো না। কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারেনি। সবই ঢুকেছে। আর বড় বড় অত্যন্ত তিন জেলা সীমান্তে কোন আইসিইউ নেই। সুতরাং তারা (সরকার) কি করেছে। কিন্তু তারা দাবি করছেন। আসলে তাদের চোখে কোন চামড়া নেই এবং তাদের কোন লজ্জা নেই।

বাংলাদেশ জার্নাল: করোনাভাইরাসের টিকা আনার প্রক্রিয়াকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

মাহমুদুর রহমান মান্না: এটা সঠিক বলার কোন জায়গা নেই। এটা একটা ঘোরতর অন্যায়। আর সরকার দেশের জনগণের টাকা লুট করেছে। এখানেও একটা কৌশল নেয়া হয়েছিলো। আর টিকার জন্য আমরা একটি মাত্র দেশ ও একটি মাত্র কোম্পানির কাছে বললাম। ঠিক সেই সময় আরো দু-তিনটা দেশ আমাদেরকে প্রস্তাব দিলো, কিন্তু আমরা পাত্তা দেয়নি। আমরা কি মনে করেছিলাম যে, আমাদেরকে তাদের (অন্য দেশ) কাছে যেতে হবে না। এখন যে বন্ধ হয়ে গেলো?

বাংলাদেশ জার্নাল: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোন কার্যক্রম নেই। ঐক্যফ্রন্ট আছে, না কি ভেঙে গেছে?

মাহমুদুর রহমান মান্না: নামে ও কাগজে-কলমে আছে। নাম তো মুছে ফেলা হয়নি। কিন্তু কাজকর্ম ও সক্রিয়তা নেই।

বাংলাদেশ জার্নাল: ঐক্যফ্রন্টকে আবারো গতিশীল ও সক্রিয় করার চিন্তা-ভাবনা আছে?

মাহমুদুর রহমান মান্না: এটা নির্ভর করে বড় দলের ওপর। কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের কোন উদ্যোগে নেই।

বাংলাদেশ জার্নাল: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনও যদি দলীয় সরকারের অধীনে হয়, সেই নির্বাচনে আপনারা বিরোধীতা করবেন, না কি একদাশ সংসদ নির্বাচনের মতো সেই ভোটে আপনারা যাবেন?

মাহমুদুর রহমান মান্না: আমরা এখনই সরকারের পতন ঘটাতে চাই। সেই চেষ্টা করতেই থাকবো। আর যদি না ঘটে তাহলে সেই সময়ের অবস্থা বুঝে আমরা তখন সিদ্ধান্ত নেবো।

বাংলাদেশ জার্নাল: শোনা যাচ্ছে, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আপনাকে, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরকে নিয়ে সরকার বিরোধী নতুন একটি জোট গঠন করতে যাচ্ছেন?

মাহমুদুর রহমান মান্না: কোন নতুন জোট নয়। যদি নতুন জোট হতো তাহলে তো আমরা ঘোষণা করতাম। একটা কথা আমরা বলেছি, এই উগ্র ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ঐক্য গড়ে তোলা উচিত। আবার কেউ কেউ বলছে, সবাই মিলে একটা মঞ্চে আসি। তবে আমি বলেছি, সবাই মিলে একটা মঞ্চে কখনো আসবে না। কারণ দলগুলোর মধ্যে পার্থক্য আছে যে, আপনি থাকলে আমি থাকবো না। ফলে যারা যারা পারবেন তারা ঐক্যবদ্ধ হবে। আর যার যার জায়গা থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে যুগপথ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। এটা একই তারিখ ও সময়ে করবে তারা। সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে আমরা আছি। আর আমরা তো ঐক্যফ্রন্টে আছি। আমরা চাই ঐক্যফ্রন্টটা থাকুক। এর মধ্যে আরো যদি কোন জোট হয় তাহলে হবে। তবে আমাদের মধ্যে মত-প্রার্থক্য আছে। এটা সামনে রেখেই যাতে আমরা যেতে পারি-সেই চেষ্টাই আমরা করছি। আর আমরা কর্মসূচিগুলো একসাথে করেছি, কিন্তু এটাকে জোটে রূপান্তর করার কথা এখনই ভাবছি না। যদি দেখা দেয়, ঐক্যফ্রন্ট হলো না। ওই সময় যদি জোট গঠন করার প্রক্রিয়া দেখা দেয়, তখন হবে। তবে এখন ভাবছি না।

বাংলাদেশ জার্নাল: নাগরিক ঐক্য নিয়ে আপনার চিন্তা-ভাবনা কি?

মাহমুদুর রহমান মান্না: নাগরিক ঐক্য একটা সত্য থেকে জন্ম নিয়েছে। আমাদের সবার সম্মিলিত স্বপ্ন হচ্ছে, দেশে দুটি বড় বড় দলের কাছে কোন আশা নেই। এই দুটি দলের বাইরে একটি তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলা। যেটা এদেশের প্রয়োজনে এবং যারা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গড়ে তুলবে। আমরা সেই স্বপ্ন নিয়েই কাজ করছি।

বাংলাদেশ জার্নাল- ওআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত