জিএম কাদেরের প্রতি ক্ষোভ, রওশনকে দলের হাল ধরার আহ্বান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২২, ২১:৫৫
দল পরিচালনায় ব্যর্থতা, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অভিযোগ এনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। জাতীয় পার্টিকে বাঁচাতে বিরোধীনেতা রওশন এরশাদকে দলের হাল ধরার অনুরোধও জানান তারা।
শনিবার রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় জাপার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পৃষ্টপোষক রওশনের প্রতি দলের সিনিয়র নোতারা এ আহ্বান জানান।
সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রফেসর দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, আপনার নামের পাশে এরশাদ আছে। বাংলার মানুষ আপনাকে নেতৃত্ব দেখতে চায়। জাতীয় পার্টি আজ সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। যে লোক কোনদিন জেল খাটেনি, রাজপথে এরশাদ মুক্তি আন্দোলন করেনি তার কাছে এরশাদের জাতীয় পার্টি নিরাপদ নয়।
জাপার সাবেক এমপি নূরুল ইসলাম মিলন বলেন, পার্টির কর্মীরা আজ অসহায়, তাদের খোজ আজ কেউ নেয় না। আপনাকে (রওশন এরশাদ) দলের দায়িত্ব নিতে হবে। পার্টির লাখো কর্মী আপনার অপেক্ষায় আছে।
জাপার সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এরশাদ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, আমাদের আজ খুব দুঃসময় চলছে। আপনি (রওশন) যখন অসুস্থ তখন আপনার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল করলে আমাকে বাধা দেয়া হয়। প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। আপনি যখন সংকটাপন্ন অবস্থায় থাইল্যান্ড যান, তারপরের দিন তারা কক্সবাজারে দলবেঁধে আমোদ ফুর্তি করেছে। কাজী মামুন রওশন এরশাদের জীবদ্দশায় সাদ এরশাদকে পার্টির চেয়ারম্যান করার দাবি জানান।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা বলেন, জাতীয় পার্টিতে শুধুই বিশৃঙ্খলা, দ্বিধাবিভক্তি। কেন্দ্রে শুধু পদ আমদানি হয়। মুরগির মত দলীয় পদ বিক্রি হচ্ছে।
জাপার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন রাজু বলেন, আজকে যারা আপনার (রওশন) ডাকে সাড়া দেয়নি তারা জাতীয় পার্টি করে না। তারা আপনাকে চালেঞ্জ করেছে। কাউন্সিলে কথা ছিল আপনার দলীয় পতাকা আপনি ব্যবহার করবেন। সকল সভায় সভাপতিত্ব করবেন আপনি। আপনার পরামর্শে দল পরিচালিত হবে। কোন কথা রাখা হয়নি।
সভায় উপস্থিত ছিলেন রওশন পুত্র রাহগীর আল মাহি (সাদ এরশাদ), রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসিহ, জিএম কাদের এর ভগ্নিপতি ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান হবি, ক্বারী হাবিবুল্লাহ বেলালী, জাপার সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য এমএ সাত্তার, প্রফেসর দেলোয়ার হোসেন খান, কাজী মামুনুর রশীদ, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, নরুল ইসলাম নুরু, ইকবাল হোসেন রাজু, মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, আশরাফ সিদ্দিকী প্রমুখ।
দীর্ঘ দশ মাসের বেশি সময় অসুস্থ থাকার পরে সুস্থ হয়ে দেশে আসার পর এই প্রথম নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করলেন বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ।
সভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরসহ দলের সাংসদ ও শীর্ষনেতাদের দাওয়াত করা হলেও তাদের অধিকাংশই আসেননি।
সভায় বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির কর্মকান্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করে দলছুট, বাদপড়া ও দলের ত্যাগি নেতাকর্মীদের ফিরিয়ে এনে জাতীয় পার্টিকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য রাখেন। অন্যথায় দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে ভবিষ্যতে দলের হাল ধরার ইঙ্গিত দেন তিনি।
জিএম কাদের এর দল পরিচালনায় ব্যর্থতার জন্য অসন্তোষ প্রকাশ করে রওশন এরশাদ বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর গত তিনবছরে জাতীয় পার্টি আজ এলোমেলো।
কী আর বলবো এরশাদের রেখে যাওয়া শক্তিশালী জাপা আজ দুর্বল। এরকম দুর্বল হলে আমরা রাজনীতিতে ঠিকে থাকতে পারবো না। দলকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমকক্ষ বানাতে হবে।
তিনি বলেন, যাদের দল থেকে বাদ দেয়া হয়েছে তাদেরকে ফিরিয়ে নিতে হবে। যারা চলে গেছে তাদেরকেও ফিরিয়ে আনতে হবে। অনেক ভালো ভালো নেতাকর্মী দলের বাইরে আছে, তাদেরকে আনতে হবে। নতুন প্রজন্মকে দলে টানতে হবে। শাহ্ মোয়াজ্জেম, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ অনেক সিনিয়র নেতা পার্টি ছেড়ে চলে গেছেন তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে রওশন আরও বলেন, রওশন দীর্ঘ ছয়মাস আমি থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। পার্টির কেউ খোঁজ নেয়নি আমার। আমি সবার খোজ নিয়েছি। অথচ যাদেরকে দল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে তারাই আমার নিয়মিত খোজ রেখেছেন। মসজিদ, মাজারসহ বিভিন্ন উপাসনালয়ে দোয়া প্রার্থনা করেছে।
দলের নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, আজকে যারা এই সভায় উপস্থিত হয়েছেন তারাই পার্টির প্রকৃত নেতাকর্মী। আজ পল্লীবন্ধু এরশাদ নেই। উনি থাকলে পার্টি অন্যরকম হতো। পার্টি শক্তিশালী করার প্রয়োজনে যা যা করার দরকার তাই করবো। এরশাদ তিলে তিলে এই দলটা গড়েছেন। সকলকে নিয়েই কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, বিমানবন্দরে আমি আসার দিন এত মানুষ আমাকে যে অভ্যর্থনা জানিয়েছে তা দেখে আমার দু'চোখে জল এসে এসে গেছে।
প্রয়াত এরশাদকে স্মরণ করে রওশন এরশাদ বলেন, এরশাদ ওপারে ভালো আছেন। মৃত্যুর আগের রাতে তিনি আমাকে বলেছিলেন, আল্লাহর রসূল আমার পাশে এসে দাড়িয়ে থাকে। সকালে শুনি উনি ইন্তেকাল করেছেন। উনি জান্নাতবাসী হবেন। কারণ, তিনি ইসলামের খাদেম ছিলেন। ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম করেছিলেন, পবিত্র শুক্রবার ছুটি ঘোষণা করেন। মসজিদ মন্দিরসহ সকল উপাসনালয়ের পানি ও বিদুৎ বিল মওকুফ করেছিলেন।
রওশনের মতবিনিময় সভা যাতে সফল না হয় সেজন্য দলের সংসদ সদস্য ও সিনিয়র নেতাদের বনানী অফিসে ডেকে নেন দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের। একসঙ্গে যাবেন বলে নেতাদের তার সামনে বসিয়ে রেখে সময় পার করে দেন। বরং এসময় বিরোধী দলের নেতাকে ইঙ্গিত করে কথাবার্তা বলেন তিনি।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমএম