ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

শাওনের মৃত্যু: পুলিশের দাবি নিয়ে যা বলছে বিএনপি

  আকরাম হোসেন

প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮:৫৮  
আপডেট :
 ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:২০

শাওনের মৃত্যু: পুলিশের দাবি নিয়ে যা বলছে বিএনপি
ফাইল ফটো

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের সময় গুলিতে নয়, ইটের আঘাতে যুবদল কর্মী শহিদুল ইসলাম শাওনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে মুন্সিগঞ্জ জেলা পুলিশ। সুরতহাল ও ভিসেরা প্রতিবেদন পর্যালোচনায় ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এ দাবি করে জেলা পুলিশ। তবে পুলিশের এই বক্তব্যকে আমলে নিচ্ছে না বিএনপি। দলটির নেতাদের দাবি, ময়নাতদন্তের এ প্রতিবেদন উদ্দেশ্যমূলকভাবে তৈরি করা হয়েছে।

বুধবার দুপুরে মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মাহফুজুর রহমান আল মামুন। তিনি বলেন, ২১ সেপ্টেম্বর পুলিশের ওপর বিএনপির নেতা-কর্মীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপের একপর্যায়ে যুবদল কর্মী শহিদুল ও তার সঙ্গে থাকা বিএনপির অপর এক কর্মী পেছন থেকে ছোড়া ঢিলে আঘাত পান। তাকে আত্মীয়স্বজন চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান। পরদিন রাত আনুমানিক ৯টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে নিহত শহিদুলের মরদেহের সুরতহাল সম্পন্ন করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে হস্তান্তর করে। অতঃপর ফরেনসিক বিভাগ লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করতে ভিসেরা পরীক্ষা করে। ভিসেরা পরীক্ষায় কোনো বিষ নেই মর্মে মতামত দেয়া হয়। সুরতহাল ও ভিসেরা প্রতিবেদন পর্যালোচনায় ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে মাথায় আঘাতের কারণে শাওনের মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মাথার পেছনে থেঁতলানো আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়া গুলির কোনো আঘাত নেই। ইটের আঘাতেই শহিদুলের মৃত্যু হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, পু্লিশের এই বক্তব্যে বোঝা যায় তারা কারো উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করছে। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ সরাসরি গুলি করে বিএনপি নেতাকর্মী হত্যা করছে। ভোলায় গুলি করে হত্যা করেছে। নারায়ণগঞ্জ করেছে, মুন্সিগঞ্জ করেছে। মুন্সিগঞ্চের দায় নিতে অসুবিধা কোথায়? হত্যা করলে হত্যার দায় নিতে এত লজ্জা বোধ কেন?

ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এব্যাপারে মন্তব্য করতে চাই না। কারণ সবকিছু দলীয়করণ হয়েছে। কোনো কিছু দলীয়করণের বাইরে দেখি না। পুলিশের বক্তব্য, ময়নাতদন্ত আলাদা করে বলার কিছু নাই।

যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আওয়ামী লীগের আপাদমস্তক শাখা-প্রশাখার মধ্যে যে মিথ্যাচার এবং ভণ্ডামি তার একটি প্রতিফলন হচ্ছে এটা। আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দ শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমানের অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়েও কত রকমের কত ব্যাখ্যা আছে। কোনো ব্যাখ্যা দিয়ে একটা মৃত্যুর দায় এড়ানো যায় না। মৃত্যুর বাস্তবতা শাওনের পরিবার বুঝছে। এটা নিয়ে আর বিতর্ক করে লাভ কী? শাওন তো আর ফেরত আসবে না। যা ইচ্ছা ওরা বলুক, বলে শান্তি পাক।

তবে এসব করে বিএনপির আন্দোলন থামানো যাবে না বলে মনে করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, এসব ঘটনার মাধ্যমে বিএনপি আরো শক্তি সঞ্চয় করবে। শুধু বিএনপি না, যারা গণতন্ত্রকামী মানুষ তারা শক্তি সঞ্চয় করবে। জীবননাশ হচ্ছে আবার জীবননাশের পরেও পরিবারকে নানা রকম হুমকি দেয়া হয়। নানা রকম ব্যাখ্যা দেয়া হয়। এই সরকার যে পুরোপুরি ফ্যাসিস্ট সেই বিশ্বাশ বিএনপি ও দেশের মানুষের মাঝে আরো জোরদার হবে। জোরদার হলে ফ্যাসিস্ট প্রতিরোধ করার শক্তিও জোরদার হবে।

দুপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল আসলাম আলমগীর বলেন, এখনো আমরা প্রতিবেদনের দেখিনি। যদি তাই হয় তা হলে এই ময়নাতদন্ত রিপোর্ট তৈরি করা।

জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ও দলীয় নেতা-কর্মী হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপি। সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের মধ্যে গুলিতে শাওন ও বিএনপির সমর্থক জাহাঙ্গীর মাদবর (৩৮) গুরুতর আহত হন। পরের দিন রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শহিদুলের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দুটি পৃথক মামলা হয়। এসব মামলায় বিএনপির ১ হাজার ৩৬৫ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। দুটি মামলায় ২৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এএইচ/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত