ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

ভয়ানক কিছু বিমান ছিনতাইয়ের কাহিনি

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২২, ১৭:০২  
আপডেট :
 ৩০ মার্চ ২০২২, ১৭:২৩

ভয়ানক কিছু বিমান ছিনতাইয়ের কাহিনি

সচরাচর আমরা অনেক চুরি কিংবা ছিনতাইয়ের ঘটনা শুনে থাকি। তবে কিছু কিছু চুরি বা ছিনতাইয়ের ঘটনা থাকে যা রীতিমতো ভয়ানক। যা ভাবতেই অনেকের গা শিওরে ওঠে। আজ আমরা আপনাদের জানাবো বিশ্বে ঘটে যাওয়া এমনই কিছু বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা।

৯২ জন যাত্রী এবং ছয়জন ক্রু নিয়ে গ্রিসের এথেন্স থেকে মিশরের কায়রো যাচ্ছিল ইজিপ্ট এয়ারের একটি বিমান। ঘটনাটি ১৯৮৫ সালের ২৩ নভেম্বরের।

ফাইট এটেন্ডেডরা যখন যাত্রীদের মাঝে খবরের কাগজ বিতরণ করছিলেন তখন হঠাৎই বিমানে থাকা সব যাত্রীকে অবাক করে একজন যাত্রী জোর করে ঢুকে যায় ককপিটে। তিনি ছিলেন একজন ছিনতাইকারী। তার সাথে থাকা বাকি দুইজন ছিনতাইকারীদের মধ্যে একজন সামনে এবং অপরজন বিমানের পেছনে অবস্থান নেন।

তখন তারা অস্ত্র বের করে। যাত্রীদের নড়াচড়া করতে নিষেধ করে তাদের কাছ থেকে পাসপোর্ট কেড়ে নেয়া হয়। এক পর্যায়ে ছিনতাইকারীদের একজন এক যাত্রীর পাসপোর্ট দিতে বলে।

সে ব্যক্তি ব্যাগ থেকে পাসপোর্ট বের না করে একটি পিস্তল বের করেন এবং এক ছিনতাইকারীকে গুলি করেন। এতে সে ছিনতাইকারী মারা যায়। আসোলে সেই ব্যাক্তিটি ছিল মিশরের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। যার কারনে তার ব্যাগে পিস্তল থাকাটা স্বাভাবিক ছিলো।

তবে সে সময় ককপিট থেকে অপর ছিনতাইকারী বেরিয়ে আসে। এবং তাদের মধ্যে মাঝ আকাশেই শুরু হয় গোলাগুলি। তখন বিমানের কেবিন প্রেশার নেমে যায় এবং অক্সিজেন মাসক নেমে আসে। ছিনতাইকারীরা বলে বিমান তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে এবং কাউকে নড়াচড়া করতে নিষেধ করে।

তৎক্ষণাত বিমানটি মাল্টায় অবতরণ করে। সেখানে নেমে ছিনতাইকারীরা বিমানের জন্য জ্বালানী তেল দাবি করে। কিন্তু বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জিম্মি যাত্রীদের মুক্তি দাবী করে জ্বালানী তেল দেয়ার পরিবর্তে। কিন্তু ছিনতাইকারীরা তাদের দাবিতে অনড় থাকে। এক পর্যায়ে তারা বলে জ্বালানী তেল না দিলে প্রতি ১০ মিনিটে একজন যাত্রীকে হত্যা করা হবে। এভাবে তারা কয়েকজন যাত্রীকে গুলি করে প্লেনের বাইরে রানওয়েতে ফেলে দেয়। কিন্তু তারপরেও জ্বালানী তেল সরবরাহ করেনি মাল্টা কর্তৃপক্ষ।

পরেরদিন বিকেল ৩:৪৫ মিনিটে মাল্টা সরকারের অনুমোদন নিয়ে মিশরের কমান্ডোরা বিমানটিতে অভিযান চালিয়ে জিম্মি দশার অবসান ঘটায়। সে ঘটনায় দুই ছিনতাইকারীসহ ৫৯ জন মানুষ মারা যায়। বিমানে হামলার কারণে ২৭ জন আহত হয়।

নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে ভারতের মুম্বাই থেকে প্যান অ্যাম-এর বিমান। সময়টা ১৯৮৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। কিন্তু মুম্বাই থেকে ছেড়ে আসা বিমানটির গন্তব্য পরিবর্তন হয়ে যায় এবং বিমানটি পাকিস্তানের করাচি বিমানবন্দরে নামে। এবং তার অন্যতম কারন অস্ত্র নিয়ে বিমানটিতে অবস্থান করেছিলো ফিলিস্তিনী জঙ্গিরা।

বিমানে ঢুকেই অস্ত্রধারীরা কেবিন ক্রুদের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে বলে, তাদের পাইলটের কাছ নিয়ে যেতে হবে।ছিনতাইকারীরা পাইলটদের ফিরিয়ে আনার জন্য নানা চাপ দিচ্ছিল। কারণ তাদের উদ্দেশ্য ছিল বিমানটিকে ইসরায়েল অথবা সাইপ্রাসে নিয়ে যাওয়া।

তখন কেবিন ক্রুদের মধ্যে একজন বেশ দ্রুততার সাথে পাইলটদের বিষয়টি জানিয়ে দেয় এবং তখন পাইলটরা বেশ দ্রুততার সাথে বিমান থেকে বেরিয়ে যায়।

পরে পাইলটরা বিমানে ফিরে না আসায় একজন যাত্রী গুলি করে হত্যা করে বিমান থেকে নিচে ফেলে দেয়া হয়। এর মাধ্যমে ছিনতাইকারীরা পাইলটদের ফিরে আসার জন্য চাপ তৈরি করছিল। ছিনতাইকারীরা আমেরিকান যাত্রীদের খুঁজছিল।

২২ জন নিহত এবং ১৫০ জন আহত হয়েছিল। বিমানটি যখন টারমার্কে দাঁড়ানো অবস্থায় ছিল, সে সময় নিরাপত্তা রক্ষীদের ছদ্মবেশ ধারণ করে বিমানে ঢুকে পড়ে। সে বিমান ছিনতাইয়ের রক্তাক্ত অবসান হয়।

সে বিমানে ছিনতাইকারীদের গুলিতে নিহত হয়েছিল ভারতীয় কেবিন ক্রু নিরজা। যাকে নিয়ে বলিউডে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র ।

যখন সন্ধ্যা হয় তখন বিমানের ভেতরেও অন্ধকার নেমে আসে। তখন বিমানের তিনটি দরজা খুলে দেয়া হয়। অন্ধকারের মধ্যে অস্ত্রধারীরা বিষয়টি বুঝতে পারেননি। সে সুযোগে অনেক যাত্রীকে নামিয়ে দেন কেবিন ক্রুরা। এক পর্যায়ে অস্ত্রধারীরা বিমান ছেড়ে পালিয়ে যাবার সময় পাকিস্তানী নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে।

কুয়েত এয়ারওয়েজ-এর একটি বিমানের যাত্রা উদ্দেশ্য পাকিস্তানের করাচি। সবকিছুই ঠিকঠাক । নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বিমানটি আকাশে উড়তে শুরু গন্তব্যের দিকে।

তবে তার পরেই বাধে বিপত্তি। উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যে বিমানটি চলে যায় ছিনতাইকারীদের দখলে। ছিনতাইকারীর সংখ্যা ছিলো চার এবং তারা সবাই ছিলেন লেবাননের ছিনতাইকারীরা পরক্ষেনেই বিমানটির দিক পরিবর্তন করে পাকিস্তানের পরিবর্তে ইরানের তেহরানে নিয়ে যায় বিমানটি।

তেহরানে অবতরণের পর নারী, শিশু এবং মুসলিমদের ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু মার্কিন সংস্থা ইউএসএআইডি'র দুই কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা করে। এবং ছয়দিন জিম্মি অবস্থার পর ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী বিমানটিতে অভিযান চালায় এবং নয়জনকে মুক্ত করে।

১৯৯৯ সালের ২৪ জানুয়ারির ঠিক আগের দিনটি ছিলো বড়দিন। এদিন কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দর থেকে ১৮০ জন যাত্রী নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট উড্ডয়ন করে।

বিমানটি আকাশে উঠার ৩০ মিনিট পরই ছিনতাইকারীরা বিমানটি তাদের দখলে নিয়ে নেয়। এরপর বিমানটিকে পাকিস্তানের আকাশ সীমায় নিয়ে যায় কিন্তু এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান হওয়ায় সেটিকে অবতরণের অনুমতি দেয়া হয়নি অন্যদিকে বিমানের জ্বালানীও প্রায় শেষ হয়ে আসছিল।

বিমানটি ভারতের আকাশ সীমায় ফিরে এসে অমৃতসর বিমানবন্দরে অবতরণ করে।কিন্তু বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সেটিকে জ্বালানী সরবরাহ করছিল না।

এদিকে বিমানের ভেতর থেকে পাইলট কন্ট্রোল রুমকে জানায় যে চারজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছু জ্বালানী দেয়া হয়। এবং ভারত সরকার পাকিস্তানের সাথে কথা বলে। এরপর সেটি উড়ে যায় পাকিস্তানের লাহোর বিমানবন্দরে। সেখানে বিমানটিকে নামার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু সেখান থেকে জ্বালানী নিয়ে বিমানটি চলে যায় দুবাইতে।

সেখানে যাবার পর ছিনতাইকারীরা ২৭ জন জিম্মিকে ছেড়ে দেয় এবং নিহতদের মধ্যে একজনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

এরপর বিমানটি চলে আসে আফগানিস্তানের কান্দাহার বিমানবন্দরে। সেখানে যাত্রীরা ছয়দিন ছিলেন বিমানের ভেতরেই। যাত্রীদের জিম্মি করে ছিনতাইকারীরা ভারতের কারাগারে আটক তাদের ৩৬জনকে ফেরত চায়। এছাড়াও তারা ২০০ মিলিয়ন ডলারও দাবি করে। সবশেষ ভারতের কারাগারে আটক তিন জঙ্গিকে মুক্তি দেবার বিনিময়ে বিমানের জিম্মি নাটকের অবসান ঘটে।

বিশ্বের একাধিক সন্ত্রাসী হামলা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে চালানো সন্ত্রাসী হামলা। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় চারটি বিমান ছিনতাই করে ১৯ জন ছিনতাইকারী। এবং সে বিমানগুলো দিয়ে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়।

সে হামলার পরিকল্পনাকারী ছিলেন আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন।

সকাল ৮:৪৬ মিনিটে বস্টন থেকে লস এঞ্জেলস গামী আমেরিকান এয়ার লাইন্স-এর বিমান ছিনতাই করে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর টাওয়ারে আঘাত করে। ৯:০৩ মিনিটে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দক্ষিণ টাওয়ারে আঘাত করে বস্টন থেকে লস এঞ্জেলস গামী ইউনাইটেড এয়ার লাইন্স-এর বিমান ছিনতাই হওয়া বিমানটি। এরপর ৯:৩৭ মিনিটে আমেরিকান এয়ারলাইন্স-এর আরেকটি ফ্লাইট ছিনতাই করে ওয়াশিংটনে পেন্টাগন ভবনে আঘাত করে। সবশেষ ১০:০৩ মিনিটে ইউনাইটেড এয়ার লাইন্স-এর আরেকটি বিমান ছিনতাই করা হয়। কিন্তু সেটি পেনসিলভানিয়াতে বিধ্বস্ত হয়। সূত্র: বিবিসি

বাংলাদেশ জার্নাল/সেফু/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত