ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

যেভাবে মধু তৈরি করে মৌমাছি

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:০৪  
আপডেট :
 ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:০৬

যেভাবে মধু তৈরি করে মৌমাছি
প্রতীকী ছবি

পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি খাদ্যের নাম করতেই চলে আসবে মধুর নাম। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে মধু তৈরির কৃতিত্ব পুরোটাই মৌমাছি নামের ছোট্ট একটা প্রাণীর। ফ্রুক্টোজ, গ্লুকোজ, পানি, তেল ও কিছু বিশেষ ধরনের এনজাইমের সংমিশ্রণে তৈরি হয় মধু, যা আসলে মৌমাছি কয়েক ধাপে সম্পন্ন করে।

মৌমাছিরা নিজেদের খাদ্য হিসেবে ফুলের মধুগ্রন্থি থেকে সংগ্রহ করে এক প্রকার মিষ্টি তরল পদার্থ। যাকে বলা হয় নেক্টার বা মধুরস। মৌচাকের দেড় দুই কিলোমিটারের কাছাকাছি ফুল না পেলে এই রস সংগ্রহের জন্য মৌমাছি ৭ থেকে ৯ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে যেতে পারে।

কর্মী মৌমাছি ফুলের কাছে গিয়ে টিউবের মতো হুল দিয়ে রস শোষণ করে। মৌমাছির দুটি পাকস্থলীর মধ্যে একটিতে অর্থাৎ মধু পাকস্থলীতে জমা হয় এই রস, মধু পাকস্থলীর ধারণক্ষমতা প্রায় ৭০ মিলিগ্রাম। পাকস্থলী পূর্ণ হলে তা প্রায় মৌমাছিটার সমান ওজনের হয়।

জেনে অবাক হবেন, এই পাকস্থলী পূর্ণ করতে মৌমাছিকে ১০০ থেকে ১৫০০ ফুল পর্যন্ত ভ্রমণ করতে হয়। আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে এই রসে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ পানি থাকে। আর মিষ্টি অংশ পুরোটাই চিনি বা সুক্রোজ।

মৌচাকে ফেরার পথেই, পেটে এনজাইমের সহায়তায় মধু প্রক্রিয়াজাতকরণ শুরু হয়ে যায়, অর্থাৎ সুক্রোজ- ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজে রুপান্তরিত হতে থাকে। চাকে ফিরে পেটের রস প্রথমে ৪-৫টি কর্মী মৌমাছির মুখে দিয়ে দেয়।

তারা প্রত্যেকে আবার সেগুলো ৮-১০টি করে অল্পবয়স্ক মৌমাছির কাছে বণ্টন করে। এবার সবাই মিলে আধা ঘণ্টা ধরে সেই রস চিবুতে থাকে। যা পৃথিবীর কোনো মেশিন করতে পারে না। চিবুনো হয়ে গেলে এই তরল- হানিকম্ব বা মধুকোষের একটি করে প্রকোষ্ঠে ঢালতে থাকে।

সেখানেই চলে মধু তৈরি হওয়ার শেষ কাজটা। প্রকোষ্ঠগুলো সব ভরে গেলে, এর আর্দ্রতা ১৪ থেকে ১৮ শতাংশের মধ্যে নিয়ে আসতে হয়। আর এই কাজ করতে কর্মী মৌমাছিরা সবাই মিলে ডানা ঝাপটিয়ে বাতাস করতে থাকে রাতদিন। বজায় রাখে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, আর্দ্রতা।

এ সময় চাকের ভেতর থেকে ভোঁ ভোঁ বা গুন গুন শব্দ শোনা যায়। এভাবে মৌ-রসের পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যেতে থাকে। তখন এনজাইমের ক্রিয়ায় সুক্রোজের পরিমাণ পাঁচ শতাংশে পৌঁছে।

তারপরও একটি দল আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের জন্য ডানা ঝাপটাতেই থাকে। সব কিছু ঠিক থাকলে এর উপর মোমের একটি আস্তরণ দেয়া হয়। মোমের ঢাকনা না দেয়া পর্যন্ত মধুকে পরিপক্ব হিসেবে ধরা হয় না। আর পরিপক্ব মধু কখনও নষ্ট হয় না। কারণ এই আর্দ্রতায় কোনো ছত্রাক ব্যাকটেরিয়া বাঁচতে পারে না।

আর মধুর ‘পিএইচ‘ স্বল্প হওয়ায় তা বেশির ভাগ ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি এবং বেঁচে থাকাকে ব্যাহত করে। মধুর গ্লুকোনিক এসিড যে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড উৎপাদন করে তা ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হতে দেয় না। তাইতো মিশরের পিরামিডে প্রায় তিন হাজার বছর আগের যে মধু পাওয়া গেছে তা ঠিক প্রথম দিনের মতোই ভালো আছে!

ফুলের রস থেকে মধু বানানোর সময় নির্ভর করে ফুলের রসে পানির পরিমাণ, মৌচাকে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার পরিমাণ, মৌচাকে কর্মী মৌমাছির সংখ্যা এবং ফুলের রসের সরবরাহের ওপর। গড়পড়তা, একটি কর্মী মৌমাছি তার সারা জীবনে এক চা চামচের ১২ ভাগের ১ ভাগ মধু উৎপাদন করে।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত