ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

কৃত্রিম মৃত সাগর বানালেন ভারতের ইউটিউবার

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৩, ১৭:০৫  
আপডেট :
 ২৭ মে ২০২৩, ১৭:৩৫

কৃত্রিম মৃত সাগর বানালেন ভারতের ইউটিউবার
ছবি: সংগৃহীত

জর্ডানের ডেড সি'র (Dead sea) নাম শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হবে। যাই হোক নাম আগে শুনে থাকুন বা নাই থাকুন, এ সাগর সবার কছে রহস্যজনক। এই সমুদ্রের পানিতে মানুষ অনায়াসে ভেসে থাকতে পারে।

এবার কৃত্রিমভাবে সেটা প্রমাণ করে দিলেন ভারতের রাজস্থানের এক ইউটিউবার (Mr Indian Hacker)। তিনি ৫ মেট্রিকটন লবণ দিয়ে তৈরি করেছেন কৃত্রিম মৃত সাগর।

ভিডিওতে দেখা যায়, একটি চৌবাচ্চা বানিয়ে পানির সাথে লবণ মিশিয়ে কৃত্রিম সাগর বানিয়েছেন। যেখানে তারা অনায়াসে পানির উপর ভেসে থাকতে পারছে।

মৃত সাগরের ইতিহাস

অনেককাল আগে জর্ডানে ফেদেরা নামে এক রাজা ছিল। সমুদ্রের পাশেই ছিল তার রাজ্য। সর্বগ্রাসী সমুদ্রকে সন্তুষ্ট করতেই প্রতি ছয় বছরে উৎসর্গ করা হতো চারজন প্রজাকে। উঁচু পাহাড় থেকে তাদের ছুঁড়ে ফেলা হতো সমুদ্রের পানিতে। এমনি একবছর চারজন প্রজাকে বাছাই করা হল। প্রথম তিনজনকে উৎসর্গ করা হল কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো চতুর্থ-জনের বেলায়। সে এতই মোটা ও ভারি ছিল যে রাজার একার পক্ষে কিছুতেই ঠেলে ফেলা সম্ভব হচ্ছিল না। কিছু সহযোগীকে ডাকা হল। তারা লোকটিকে এত জোড়েই ধাক্কা দিল যে রাজা নিজেই পা ফসকে গেলেন। তিনি পাহাড়ের একটি পাথর আঁকড়ে ধরে রাখলেন এবং প্রচণ্ড ঘামতে লাগলেন। অবশেষে পাথরটি ছুটে গেলে সরাসরি সমুদ্রের পানিতে পড়ে গেলেন। শাস্তি হিসেবে সমুদ্রের দেবতা পসাইডন তাকে পানির নীচে পাঁচ ঘন্টা জীবিত রেখেছিলেন। এরপর থেকেই এই সমুদ্র পরিচিতি পায় ডেড সি বা মৃত সাগর নামে।

এমনি কিছু লোককথা, উপকথা, গল্প ও কৌতুক প্রচলিত রয়েছে জর্ডানের ডেড সি বা মৃত সাগরকে ঘিরে। এর সম্পর্কে আরেকটি প্রচলিত ধারণা হল এর পানিতে মানুষ কখনও ডুবে যায় না আবার কোন প্রাণী বাঁচেও না। কি এমন রহস্য লুকিয়ে আছে এই মৃত সাগরে যার কারণে মানুষ ইচ্ছে করলেও ডুবতে পারে না? কেন কোন প্রাণীই বাঁচতে পারে না এই পানিতে? কেনই বা এর নাম দেয়া হল মৃত সাগর? আমরা ডেড সি বা মৃত সাগরের নাম শুনেছি। কিন্তু এর পেছনের রহস্য কি সবাই জানি? আসুন জেনে নেয়া যাক রহস্যে ঘেরা এই মৃত সাগরের ২৫টি বিস্ময়কর তথ্য।

এটিকে মৃত সাগর বা ডেড সি বলা হয়ে থাকে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হল এটি আসলে কোন সাগরই নয়। মূলত মৃত সাগর একটি লবণাক্ত পানির হ্রদ। এটি পৃথিবীর গভীরতম লবণাক্ত পানির হ্রদ। এর গভীরতা ১০০৪ ফুট বা ৩০৬ মিটার।

যদি পৃথিবীর অন্যান্য সমুদ্রের সাথে তুলনা করে মৃত সাগরের গভীরতা মাপা হয় তাহলেও এর গভীরতা নিছক ফেলে দেয়ার মত নয়। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এর সমুদ্রতটের ব্যবধান ১৪০১ ফুট বা ৪২৭ মিটার যা পৃথিবীর সর্বনিম্ন সমুদ্রতট।

এই হাইপার স্যালাইন হ্রদটি হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম লবণাক্ত হ্রদ। অনেকেই হয়তো ভাববেন মৃত সাগরই হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে লবণাক্ত পানির হ্রদ। কিন্তু যেখানে কাস্পিয়ান সাগরের উপহ্রদ গ্যারাবোগেযকলের (garabogazkol) লবনাক্ততা ৩৫%, জিবুতির আসাল হ্রদের ৩৪.৮%, এন্টার্কটিকার ভান্ডা হ্রদের ৩৫%, এবং এন্টার্কটিকার ডন জুয়ান হ্রদের লবনাক্ততা ৪৪% সেখানে মৃত সাগরের পানিতে লবণের পরিমাণ শতকরা ৩৩.৭ ভাগ।

যেহেতু মৃত সাগর বা ডেড সি কোন সাগর নয় বরং একটি হ্রদ, এর আয়তনও সাগরের তুলনায় ক্ষুদ্র। এর দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৯ মাইল বা ১৫ কিলোমিটার।

এতক্ষণে এটা নিশ্চয়ই পরিষ্কার যে এই হ্রদের লবনাক্ততা অন্যান্য সমুদ্রের তুলনায় ঢের বেশি। এটি অন্যান্য সাগরের তুলনায় ৯.৬ গুণ লবণাক্ত যার মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং অন্যান্য উপাদানের মিশ্রণ। তাই এই মৃত-সাগরকে সল্ট সিও বলা হয়ে থাকে।

মৃত সাগরে প্রাণের অস্তিত্ব নেই। তীব্র লবণাক্ততাই এর মূল কারণ। অতিরিক্ত লবণের উপস্থিতি এই হ্রদের পানিকে প্রাণী বসবাসের অনুপযোগী করে তুলেছে। মূলত প্রাণীর অস্তিত্বহীনতার কারণেই এই হ্রদের নামকরণ করা হয় ডেড সি বা মৃত সাগর। যদিও ঘটনাটি সম্পূর্ণ সত্য নয়। বর্ষাকালে পানির পরিমাণ বাড়লে লবনাক্ততা হ্রাস পায়। তখন কিছু ব্যাকটেরিয়ার জন্য বাসযোগ্য হয়ে ওঠে।

ডেড সি প্রাণীর জীবনধারণের জন্য অনুপযোগী এটা যেমন ঠিক তেমনি এটাও ঠিক যে এই ডেড সিই বর্তমানে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার অন্যতম কেন্দ্রস্থল। এখানে পরাগ ও এলার্জি উৎপাদক দ্রব্যের উপস্থিতি খুবই কম। নিম্নাঞ্চল হওয়ায় এখানে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবও কম। তাছাড়া উচ্চ ভূমণ্ডলীয় চাপ, উচ্চ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ, সর্বোপরি বিভিন্ন ধরণের খনিজ পদার্থের বিপুল উপস্থিতি রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে যার ফলে মৃত সাগরকে বর্তমানে চিকিৎসাশাস্ত্রের অন্যতম গবেষণা ক্ষেত্র হিসেবে গণ্য করা হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/জিকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত