ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্রথম নারী চা নিলামকারী মায়িশার কথা

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৩, ১৮:৪১

প্রথম নারী চা নিলামকারী মায়িশার কথা
মায়িশা। সংগৃহীত ছবি

এ যুগে এসে সমাজের প্রায় সবক্ষেত্রেই পুরুষের পাশাপাশি কাজ করছেন নারীরা। তারপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখনো নারীর পদচারণা নেই বা অতি নগন্য। এমনই একটি পেশা চা নিলামকারী। এ পেশাটি বরাবরই পুরুষের দখলে। তবে ব্যতিক্রম মায়িশা। প্রথা ভেঙে তিনিই দেশের প্রথম চা নিলামকারী নারী। সেইসব অভিজ্ঞতাই এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে বিবিসি।

গত বছর মানে ২০২২ সালের ১৪ই মার্চ চট্টগ্রামে প্রথম চায়ের নিলাম ডাকেন মায়িশা। বাবার সঙ্গে বসেই প্রথম নিলামটি ডেকেছিলেন মায়িশা।

প্রথম নিলামের অভিজ্ঞতা

‘লট নাম্বার...’ হেমারিং করে অর্থাৎ নিলামে টেবিলে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে চায়ের নিলাম শুরু করেন মায়িশা। প্রথম নিলামের অভিজ্ঞতাকে ‘জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় অভিজ্ঞতা’ বলে বর্ণনা করেছেন তিনি।

যখন আব্বু আমাকে একদিন বললো চা বিক্রি করবি? আমি বললাম দেখি পারি কিনা। সেই থেকে শুরু, সেই দিনটা ছিল ১৪ই মার্চ। বাবার সাথে বসে নিলাম পরিচালনা করা অন্য রকম এক আনন্দ। এত পজিটিভ রেসপন্স পেয়েছি, আমার কাজ করার উদ্যোম আরও বেড়ে গেছে।

চট্টগ্রামে প্রথম চায়ের নিলাম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৯ সালের ১৬ জুলাই। এরপর ৭৩ বছরের ইতিহাসে মায়িশাই প্রথম বাংলাদেশি নারী যিনি চায়ের নিলাম পরিচালনা করেছেন। চট্টগ্রামের পর শ্রীমঙ্গলেও প্রথম নারী হিসেবে চায়ের নিলাম পরিচালনা শুরু করেন তিনি।

তবে শিক্ষানবিশ হিসেবে প্রতিনিয়ত বাবা, চাচাসহ পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য যারা চা শিল্পের সাথেই যুক্ত তাদের কাছ থেকে শিখছেন বলে জানান তিনি। চায়ের গল্প শুনতে শুনতে বড় হওয়া মায়িশা রহমান এখন প্রায় প্রতি সপ্তাহেই নিলামে বিক্রি করছেন চট্টগ্রাম, সিলেট আর পঞ্চগড়ের চা।

চা নিলামের আগে কী কী কাজ করতে হয়?

প্রতি সোমবার চট্টগ্রামে চায়ের নিলাম হয়। চায়ের গুণগত মান যাচাই করে সেটার মূল্য নির্ধারণ করে থাকে ব্রোকারস প্রতিষ্ঠানগুলো।

মায়িশা রহমান বলেন, যেসব বাগানের চা বিক্রি হবে সেই নমুনাগুলো প্রথমে বাগান থেকে পাঠান বাগান মালিকেরা, সেগুলো আমরা প্রথমে টেস্ট করি। চায়ের গুনগত মান যাচাই বাছাই করি, বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করা হয়। নাকে গন্ধ নিয়ে এবং সেই নমুনা দিয়ে তৈরি লিকারটা মুখে টেস্ট করে সেটার স্বাদ কেমন বা মান কেমন তা যাচাই বাছাই করে থাকি।

লিকারের সাথে সাথে চায়ের রঙটা দেখতে কেমন – সেটাও বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করা হয় বলে জানান মিজ রহমান। পরীক্ষা করার পরে ওই চায়ের গ্রেডিং এবং রেটিং করা হয়, একইসাথে চায়ের মূল্যও নির্ধারণ করা হয়। এরপর সেই গ্রেড আর মূল্যের ওপর ভিত্তি করে একটা ক্যাটালগ তৈরি করা হয়, এরপর নিলামের আগেই ক্রেতাদের কাছে নমুনাগুলো পাঠিয়ে দেয়া হয়।

ক্রেতারাও সেসব নমুনা পরীক্ষা করেন যাচাই বাছাই করে দেখেন। এরপর নিলামের দিন ক্যাটালগটি হাতে নিয়ে তারা বসেন। এরপর শুরু হয় দাম হাঁকানো। সেখানে আমরা হেমারিং করে চা বিক্রি করি। এটা বিশাল বড় একটা কাজ। নিলামটা যখন শেষ হয় তখন আমরা ডেলিভারি ইস্যু করি। আমাদের অফিস থেকে ক্রেতারা সেটা সংগ্রহ করেন এবং চায়ের গুদাম থেকে তাদের ক্রয়কৃত চা তারা বুঝে নিয়ে নেন।

চায়ের স্বাদ পরীক্ষা করে করে মানটা সঠিকভাবে নির্ণয় করাটা খুব চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন মায়িশা। একজন শিক্ষানবিশ ‘টি টেস্টার’ হিসেবে নিজের পরিবারসহ সহকর্মী ও সিনিয়রদের যথেষ্ট সমর্থন ও সহযোগিতা পাচ্ছেন উল্লেখ করে মায়িশা বলেন ‘আমি আসলে লাকি যে এরকম সাপোর্ট পাচ্ছি, শিখতে পারছি’।

আমার বাবা আমাকে হাতে-কলমে শেখাচ্ছেন। চায়ের ফিল্ড থেকে ফ্যাক্টরি পর্যন্ত আমার চাচা নানা বিষয়ে ধারণা দিচ্ছেন, শেখাচ্ছেন, যিনি এখন ন্যাশনাল টি কোম্পানিতে আছেন। চায়ের ম্যানুফাকচারিং ও মার্কেটিংয়ের বিষয় শিখছি বাবার কাছ থেকে। যেমন চায়ের কোন লিকারটা কেমন হতে পারে, কোন লিকারটা ভালো – বা কোনও আছে কিনা ভালো কাপ না খারাপ কাপ – এটা নির্ণয় করাটা খুব কঠিন। এটা বেশি চ্যালেঞ্জিং এখনও আমার কাছে।

নারী হিসেবে নিলাম পরিচালনায় বেশি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নে মায়িশা বলেন আমাদের দেশে মেয়েরা সবক্ষেত্রে নিরাপদ না। ভিন্ন পেশাতে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়। তবে আমি এক্ষেত্রে ভাগ্যবান কারণ পজিটিভ সবকিছু পেয়েছি।

প্রথম নিলামের সময়ও সবাই তাকে সহজভাবে গ্রহণ করেছে বলে জানান মায়িশা। তিনি বলেন, যখন আমি নিলামে ডাক দেই, আমাকে নেগেটিভভাবে কেউ নেয়নি। নিলামের একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে, চা বিক্রির নির্ধারিত সময় দেয়া থাকে। আর নির্ধারিত সময়েই নির্ধারিত চা বিক্রি করতে হয়। নির্ধারিত সময়ে বিক্রি করতে না পারলে তা পরের নিলামে তোলা হয়। কিন্তু প্রথম নিলামে ক্রেতারা তাড়াহুড়া না করে মায়িশাকে সময় দিয়ে সহযোগিতা করেছে যাতে কাজটি তিনি ধীরেসুস্থে করতে পারেন।

আমি নিলাম ডাকলে সিনিয়ররাও খুশি হন। আমাকে ভালোভাবে কাজ করার জন্য নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকে অন্য ব্রোকার্সের সিনিয়ররাও, বলছিলেন মায়িশা।

কেন যুক্ত হলেন এই পেশায়?

দাদা-বাবা-চাচাদের পথ ধরে চা শিল্পের সাথে যুক্ত হয়েছেন মায়িশা রহমান। বলা যায় চা-পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের সদস্য মায়িশা। যদিও চায়ের নিলামকারী হবার কোনও স্বপ্ন ছিল না মায়িশার, তবে এক ধরনের ভালোবাসা ছিল এই চা আর চা-বাগানের প্রতি। সূত্র: বিবিসি

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত