ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

ইউরোপীয়দের বিরুদ্ধে ‘ভণ্ডামি’র অভিযোগ ফিফা সভাপতির

  ক্রীড়া ডেস্ক

প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২২, ১৯:০৪  
আপডেট :
 ১৯ নভেম্বর ২০২২, ১৯:৩১

ইউরোপীয়দের বিরুদ্ধে ‘ভণ্ডামি’র অভিযোগ ফিফা সভাপতির
ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো । ছবি: সংগৃহীত

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। এরপরেই কাতারে শুরু হবে ‘দ্যা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় ইভেন্টের আগে ফের একবার বিতর্ক শুরু হয়ে গেল। শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় সাংবাদিক সম্মেলনে বিস্ফোরণ ঘটালেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো।

এখনও বিভিন্ন দল কাতারের নিয়ম, প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি করা আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। স্টেডিয়াম নির্মাণ করতে গিয়ে অনেক শ্রমিক মারা গেছেন বলে দাবি তাদের। এছাড়া সমকামীতা, মদ নিষিদ্ধ করায়ও চটেছেন সবাই। বিশেষত ইউরোপ থেকেই প্রতিবাদ আসছে বেশি। সেই নিন্দুকদের এবার এক হাত নিয়েছেন ইনফান্তিনো। সাংবাদিক সম্মেলনে ইউরোপিয়ানদের নৈতিক জ্ঞান দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

ইনফান্তিনো বলেছেন, ইউরোপিয়ানদের কাছ থেকে অনেক লম্বা লম্বা জ্ঞান শুনছি। আমি ইউরোপিয়ান। গত ৩ হাজার বছর ধরে পৃথিবীজুড়ে আমরা যা করেছি। আমাদের আগামী ৩ হাজার বছর ক্ষমা চেয়ে তারপর নৈতিক জ্ঞান দেওয়া উচিত। এই নৈতিক শিক্ষা দেয়া একতরফা। এটি আসলে ভণ্ডামি।

ফিফা সভাপতি বলেন, শ্রমিকদের নিয়ে আসলে কে ভাবে? ফিফা ভাবে, ফুটবল ভাবে, বিশ্বকাপ ভাবে আর যদি সত্যি কথা বলি কাতারও ভেবেছে। কয়েকদিন আগে একটা অনুষ্ঠানে ছিলাম, যেখানে আমি বলেছি বিশ্বকাপে বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের জন্য আমরা কী করব...এবং আমরা কীভাবে এগোচ্ছি সেটা কয়েক সপ্তাহ পরেই সবাই দেখতে পারবেন।

এমনকি কাতার বিশ্বকাপ সেরা খেলার ইভেন্ট হবে দাবি করেন ইনফান্তিনো বলেন, আমার নিজেকে কাতারি মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে আফ্রিকান, মনে হচ্ছে সমকামী, মনে হচ্ছে বিশেষভাবে সক্ষম। আমার আজ নিজেকে মনে হচ্ছে প্রবাসী শ্রমিক।

তিনি উল্লেখ করেন, তার বাবা-মা ইতালির নাগরিক ছিলেন। কর্মসংস্থানের জন্য তাদের সুইৎজারল্যান্ডে যেতে হয়েছিল। ছোটবেলার সেই কথা মনে আছে ইনফান্তিনোর। বৈষম্যের ঘটনা তার স্কুলজীবনেও ঘটেছিল, তাই এ ব্যাপারটি তিনি ভালোই বোঝেন বলে দাবি ফিফা সভাপতির।

তিনি বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলি সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে অনুপ্রবেশকারীদের কথা ভেবে। কিন্তু ভারত, বাংলাদেশ-সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা আইনি পথেই কর্মসংস্থানের জন্য কাতারে প্রবেশ করছেন।

ইনফান্তিনো আরও বলেন, আমার কাতারের হয়ে কথা বলার প্রয়োজন নেই। কাতারই সব প্রশ্নের উত্তর দেবে। আমি শুধু ফুটবল নিয়েই বলছি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হব।

সমকামীদের প্রবেশের ব্যাপারে ফিফা সভাপতি বলেছেন, আমি নিশ্চিত করতে পারি সবাইকে স্বাগতম। যদি আপনি এখানে বা ওখানে কাউকে এর বিপরীত বলতে শুনেন। তাহলে জেনে রাখুন এটা দেশের বক্তব্য না, ফিফাও এই মত জানাচ্ছে না।

কাতারে স্টেডিয়াম নির্মাণের সময় শ্রমিকদের অতিরিক্ত সময় খাটিয়ে নেওয়া হয়েছে, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়নি, ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, এমন নানাবিধ অভিযোগ উঠেছে। কাতারে শ্রম আইন সংশোধিত হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলেও অনেকের অভিমত।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ফিফা সভাপতি পাল্টা প্রশ্ন তুলে বলেন, ইউরোপীয় কোম্পানিগুলি কাতার-সহ বিভিন্ন দেশ থেকে কোটি কোটি অর্থ আদায় করে। তাদের কেউই পরিযায়ী শ্রমিকদের অধিকারের কথা বলে না। তাতে লাভের পরিমাণ কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু ওই সংস্থাগুলির তুলনায় অনেক কম অর্থ আদায় করেও ফিফা পরিযায়ী শ্রমিকদের সুরক্ষায় নানাবিধ কাজ করে থাকে। কাতারের মতো বিভিন্ন বিধিনিষেধ অন্য অনেক দেশে রয়েছে বলে দাবি ইনফান্তিনোর।

ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ান ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাদের প্রতিবেদনে বলেছিল, বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বাগতিক হওয়ার পর থেকে ৬,৫০০ অভিবাসী শ্রমিক নিহত হয়েছে। সমকামীদের অধিকার খর্ব করার অভিযোগে পশ্চিমাদের তোপের মুখে কাতার।

পশ্চিমাদের এমন সব অভিযোগে প্রতিবারই অস্বীকার করে গেছে কাতার সরকার। দেশটির পাল্টা অভিযোগ, পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো সবসময়ই ‘তিলকে তাল’ করে দেখাচ্ছে। কাতার সরকারের দাবি, বিশ্বকাপ প্রকল্পের বাইরের মৃত্যুকেও ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে উপস্থাপন করেছে এসব গণমাধ্যম।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত